ময়মনসিংহের ত্রিশালে আগুনে ভস্মীভূত এক অসহায় পরিবারকে সহযোগিতা করতে এসে শুভ নামের স্থানীয় এক যুবকের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছেন ‘কুঁড়েঘর’ ব্যান্ডের শিল্পী তাসরিফ খান। মঙ্গলবার রাতে এঘটনায় স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেন।
জানা যায়, উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের বালিদিয়া গ্রামের কাশেম আলীর বাড়িতে গত রবিবার রাত নয়টার দিকের এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দু’টি বসতঘর ও একটি গোয়ালঘর ভস্মীভূত হয়। এতে ঘরের আসবাবপত্র সহ তিনটি গরু পুড়ে মারা যায়। এতে সবকিছু হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। বিষয়টি জানতে পেরে সিলেটের বন্যাদুর্গত বিপর্যস্ত মানুষদের পাশে কোটি টাকার ফান্ড সংগ্রহ করে বিতরণ করে পরিচিতি পাওয়া তাসরিফ সহযোগিতা চেয়ে সোমবার রাতে ফেইসবুক লাইভে আসেন এবং আশ্বাস দেন পরেরদিনই সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার। তারই প্রেক্ষিতে সহযোগিতা করতে এসে মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে স্থানীয় কালিরবাজার এলাকায় পৌঁছালে তার এবং বহরে থাকা লোকজনের সাথে এঘটনা ঘটে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাসরিফ খান ”হুমকি দেওয়া স্থানীয় ওই যুবকের ছবি” মোবাইলে দেখিয়ে জানান, “লালশার্ট পরা এই ছেলেটা আজ সন্ধ্যায় আমাদের সাথে যা তা ব্যাবহার করলো। ছেলেটার নাম শুভ। ত্রিশালের এই ছেলেটা কতবড় নেতা আমার জানা নেই, তবে আজ কাশেম চাচাকে সাহায্য করতে গিয়ে ত্রিশালের কালির বাজার এলাকায় আমি গাড়িতে বসে মুখের ব্যায়ামগুলো করছিলাম। ছেলেটা তার বন্ধুদের নিয়ে ছবি তুলতে আসে। আমার ছোটভাই তানজীব গাড়ি থেকে নেমে তাকে বুঝিয়ে বলতে যায়, এখন ছবি তুলা যাবেনা, ভাইয়া ব্যায়াম(মুখের সমস্যায়) করছে। এই কথা শুনে ছেলেটা তানজীব কে ধমকের স্বরে বলে, ‘তার এলাকায় থাকলে নাকি তার কথা মানতেই হবে, ছবি তুলতেই হবে, এমনকি সে যা বলে তাই করতে হবে, অন্যথায় আমরা যেন এই এলাকা থেকে চলে যাই। কিছুক্ষন পর এই কথাগুলো জানতে পেরে এক মুহূর্তের জন্য ভাবছিলাম আমি চলেই যাই। যাই হোক, আমি থানায় ফোন করে পুলিশের সহায়তা নিয়ে ঐ এলাকায় প্রবেশ করি এবং কাশেম চাচাকে তার প্রাপ্য ঘর বুঝিয়ে দিয়ে আসি।”
‘কুঁড়েঘর’ নামে তাসরিফ খানদের একটি ব্যান্ড আছে। ২০১৭ সাল থেকে ব্যান্ডটি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। ‘আমি মানে তুমি’, ‘ব্যাচেলর’, ‘ময়না রে’সহ ৯০টির বেশি মৌলিক গান রয়েছে। ২০২২ সালে সিলেটের বন্যাদুর্গত বিপর্যস্ত মানুষদের জন্য আর্থিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন তরুণ গায়ক তাসরিফ খান। সেই লাইভ মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। সে সময় কোটি টাকার বেশি ফান্ড সংগ্রহ করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘বাইশের বন্যা’ নামের একটি বইও লিখেছেন তিনি। বইটি নিয়েও তাঁর ভক্তদের মধ্য সাড়া পড়ে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কাশেম আলী বলেন, তাসরিফ আমাদের জন্য দুইটি ঘর, নগদ ১০ হাজার টাকা, কিছু পোষাক ও একটি গরু কিনে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন। আমাদের জন্য উনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছেন। ঘরের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। যে ঘটনাটি ঘটেছে তা আমাদের ত্রিশালের জন্য দুর্নাম।
ত্রিশাল থানার উপ-পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন জানান, কালির বাজার এলাকায় আগুন লেগে ক্ষতিগ্রস্ত এক পরিবারকে সহযোগিতা করতে এসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে তাসরিফ আমাদের সহযোগিতা চাওয়ায় ওসি স্যারের নির্দেশে আমরা তাদের নিরাপত্তা দেই। তবে এবিষয়ে তারা কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি।
আ.খ/ রবি / মেহেদি জামান লিজন