মো.জুলফিকার আলী জুয়েল:
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে এক নারী বন্দিকে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে ২৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়ার বিরুদ্ধে। এ অভিযোগ তদন্তে এরই মধ্যে দুটি কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ। এবার তাকে কাশিমপুর থেকে কুমিল্লার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সোমবার (৩ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে প্রিজন ভ্যানে তাকে কুমিল্লায় পাঠানো হয়। কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের (ভারপ্রাপ্ত) জেল সুপার মো. ওবায়দুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে স্থানন্তর করা হয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় ৪০ মাস ধরে বন্দি পাপিয়া। ২৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে জেল বিধি অনুযায়ী তাকে ‘রাইটার’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি এক রুনা লায়লা নামে হাজতিকে সম্প্রতি নির্যাতন করেন। তার কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেন। এমন অভিযোগে রুনার ছোট ভাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে গঠন করা হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটি। তার প্রেক্ষিতে পাপিয়াকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে মঙ্গলবার গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিছানায় অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্যাতনের শিকার রুনা লায়লা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান। নির্যাতনে পুরো পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান কালো হয়ে গেছে। শরীরের ব্যথায় একপাশ থেকে অন্যপাশে কাত হতে পারছেন না।
অসুস্থ রুনা লায়লাকে দেখতে হাসপাতালে যান মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার ওবায়দুর রহমান। তিনি এ ঘটনার জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
রুনা লায়লা বলেন, ‘আমার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা ছিল। সেই টাকা কেড়ে নেওয়ার জন্য কারাগারের হাজতি যুব মহিলা লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াসহ তার সহযোগীরা সিসি ক্যামেরা নেই এমন স্থানে নিয়ে যায়। টাকা না দিতে চাইলে তারা জোর করে সেই টাকা নিয়ে যায়। পরে পাপিয়া ও তার সহযোগীরা শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে অমানবিকভাবে আমাকে মারধর করে। আমাকে না মারার জন্য পাপিয়ার হাতে-পায়ে ধরেছি। কিন্তু সে আমার কথা শোনেনি। আরও বেশি করে আমারে মেরেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের কাছে পানি চাইলে ময়লা পানি দেয়। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে পাপিয়া ভয় দেখিয়ে বলে, কাউকে বললে আবারও জেলে আসতে হবে। তখন আরও নির্যাতন করবো। আমার জামিন হয়ে যেতো, তোর কারণে আমি আবার ঝামেলায় পড়লাম।
রুনা লায়লা আরও বলেন, ‘আমি উকিল জানার পর একজন কিছু টাকা দেয় কিন্তু সেটি পিসিতে জমা দিতে হবে এটা তারা বুঝতে পারেনি। সেই টাকা নেওয়ার জন্য তারা মারধর করে এবং কমল চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। পাপিয়া নিজেও মেরেছে। তার সহযোগী (কারাগারের আসামি) দিয়েও মারধর করিয়েছে।
রুনা লায়লা গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার কড়িহাতা গ্রামের আবদুল হাইয়ের মেয়ে এবং এ কে এম মাহমুদুল হকের স্ত্রী। তিনি ঢাকার কোতোয়ালি থানার ৭৩৫ নম্বর মামলার আসামি। গত ১৬ জুন থেকে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। ২৭ জুন জামিনে মুক্তি পান।
রুনা লায়লার ছোট ভাই আবদুল করিম বলেন, তার বোন নির্যাতনের কথা মনে করে প্রায়ই ভয়ে আঁতকে ওঠেন আবোলতাবোল বলা শুরু করেন। তাকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার বোনের সারা শরীরে কালো দাগ হয়ে আছে। এগুলো সবই আঘাতের চিহ্ন। কারা কর্তৃপক্ষ তাকে হাসপাতালে দেখতেও এসেছিল।
মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘যেহেতু কারাগারে ঘটনাটি ঘটেছে, তাই মানবিক কারণে তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। তার বর্তমানে অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছি।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই নারীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলছে। কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের (ভারপ্রাপ্ত) জেল সুপার ওবায়দুর রহমান বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, নথি চুরির একটি মামলায় শিক্ষানবিস আইনজীবী রুনা লায়লাকে গত ১৬ জুন কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আনা হয়। কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে নেওয়ার পর রুমার দেহ তল্লাশি করে কর্তব্যরত মেট্রন তার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা পান। ওই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পাপিয়া ও তার সহযোগী কয়েদিরা ১৯ জুন রুনার ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন তারা।