সারা দেশে একই আকৃতির শহীদ মিনার নির্মাণে উচ্চ আদালতের রুল থাকলেও মেহেরপুরের গাংনীর দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ভিন্ন আদলের শহীদ মিনার। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের যে কাঠামো তার সঙ্গে মিল নেই। অনেক বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চললেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। দেখতে নান্দনিক হলেও সেগুলো ভেঙে ফেলার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন শহীদ মিনারের বরাদ্দ না পাওয়ায় সেগুলো ভাঙতে পারছেনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে গাংনী সরকারী ডিগ্রি কলেজ ও জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। পিলারের সাথে পেঁচানো এবং জাতিয় শহীদ মিনারের সাথে এর কোন মিল নেই। তবে কর্তৃপক্ষের আদেশ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
সুত্র জানায়, নকশা অনুসরণ করে দেশে-বিদেশে একই আদলে শহীদ মিনার নির্মাণের নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে ২০২২ সালের ১৪ জুন হাইকোর্ট রুল জারি করেন। কিন্তু বিবাদীদের কাছ থেকে কোনো জবাব আসেনি। আর সুপ্রিম কোর্টের যে আইনজীবীর রিটে আদালত রুল জারি করেছিলেন, সে আইনজীবীও রুলের জবাব না আসার বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন নি। ফলে রুল জারির মধ্যেই আটকে আছে রিটটির কার্যকরিতা। গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম। প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের বেঞ্চ রুল দেন।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাঠামো, নকশা অনুসরণ করে দেশে-বিদেশে একই আদলে শহীদ মিনার নির্মাণের নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাঠামো অনুসরণ করে দেশ-বিদেশে একই ধরনের শহীদ মিনার নির্মাণের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে। সংস্কৃতি সচিব এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
গাংনী ডিগ্রি কলেজের ছাত্র রাব্বি আহমেদ জানান, ছেলে বেলা থেকেই জাতীয় শহীদ মিনারের আদলে স্থানীয় শহীদ মিনারগুলো দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু হঠাৎ করেই কলেজে ভিন্ন ধরণের শহীদ মিনার। দেখতে সুন্দর হলেও এটি কিসের আদলে এবং কেন নির্মাণ করা হয়েছে তা আজো জানতে পারা সম্ভব হয়নি। একই কথা জানালেন জোড়পুকরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হাবিবুর রহমান ও মশিউর রহমান।
গাংনী সরকারী ডিগ্রি কলেজ অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে শহীদ মিনার আছে কি না জানতে চাওয়া হয়েছিল কিন্তু কি ধরনের হবে তা নির্দেশনায় বলা হয়নি। ভিন্ন আঙ্গীকের শহীদ মিনারেরও যৌক্তিকতা রয়েছে। জাতীয় শহীদ মিনারের আদলে শহীদ মিনার নির্মাণের আদেশ আসলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানালেন তিনি।
জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান আল নুরানী বলেন, মেহেরপুর শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কে শহীদ মিনারের আদলে ২০০৮ সালের দিকে স্কুল তহবিলের টাকা দিয়ে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। পরে সরকারি ভাবে একই আদলের শহীদ মিনারের নির্দেশনা আসে। নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে একই আদলে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর হাবিবুল বাশার জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী একই আদলে শহীদ মিনার নির্মাণের কথা কিন্তু দুটি প্রতিষ্ঠান ভিন্ন আঙ্গীকে শহীদ মিনার নির্মাণ করেছে সেটি দেখা হবে এবং কোন আইনগত বিধি নিষেধ থাকলে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।