১২:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

গাছায় জুমার বয়ানে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা করায় ইমামকে মারধর ও নগ্ন ভিডিও ধারণা, গ্রেপ্তার ১

গ্রেফতারকৃত গাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মশিউর রহমান মুকুল।

গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার চান্দরা এলাকায় একটি মসজিদে জুমার বয়ানে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা করায় ইমামকে মারধর ও দিগম্বর করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পর্নোগ্রাফি আইনে গাছা থানায় মামলা হয়েছে।

পুলিশ মামলার আসামি গাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মশিউর রহমান মুকুলকে গ্রেফতার করেছে। মামলার প্রধান আসামি মুকুলের ছোট ভাই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি মফিজুর রহমান টুটুল পলাতক রয়েছে।

এক সপ্তাহ আগে এ ঘটনা ঘটলেও লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ইমাম এতদিন মুখ খুলেননি। অপরদিকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলও ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়; কিন্তু ক্রমেই আলেম সমাজ ক্ষোভে ফুঁসে উঠলে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

মামলার প্রধান আসামি এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় মসজিদের ইমাম দুই মাসের টানা ছুটি নিয়ে ভয়ে পরিবারসহ গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন।

মাদক কারবারিরা ইমামের বিবস্ত্র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ৫০ হাজার টাকাও আদায় করেছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

গাছা থানার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দরা আল আকসা জামে মসজিদের হুজরাখানায় (ইমাম সাহেবের কক্ষ) এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আলেম সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মামলার বাদী মসজিদের ইমাম মুফতি শফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, তিনি মসজিদ সংলগ্ন দারুল হাবিব নামের মাদ্রাসা পরিচালনা করেন। উক্ত মাদ্রাসার পাশে মাদক কারবারিদের বিভিন্ন অপকর্মসহ মাদক বেচা-কেনা ও মাদকের নিয়মিত আড্ডা বসত। এতে মাদ্রাসার ছাত্রদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। তিনি জুমার খুতবায় গুরুত্বসহ মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা রাখতেন। জুমায় মাদক নিয়ে আলোচনার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছিল।

তিনি জানান, এর জেরে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিরা ক্ষুব্ধ হয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিসহ তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। এসব হুমকি উপেক্ষা করে তিনি মানুষকে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে মসজিদে নিয়মিত আলোচনা অব্যাহত রাখেন।

ইমাম জানান, এতে একপর্যায়ে গত ২৬ জানুয়ারি জুমার আগের দিন দুপুর ১২টায় এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি মফিজুর রহমান টুটুলের (৩৭) নেতৃত্বে এলাকার মাদক কারবারিরা মসজিদের হুজরাখানায় (ইমাম সাহেবের কক্ষ) দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ঢুকে তার ওপর চড়াও হয়। এ সময় তাকে মারধর ও দিগম্বর করে মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে। ইমামের এ বিবস্ত্র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে।

তিনি জানান, তিনি মানসম্মানের ভয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে বিকাশে টাকা এনে দিতে বাধ্য হন। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় মাদ্রাসার ছাত্রদের মাধ্যমে তাকে মাদ্রাসা থেকে ডেকে বের করে রাস্তায় ফেলে আবারো বেধড়ক মারধর করে। অবশেষে নিরুপায় হয়ে তিনি এলাকার আলেম-ওলামাদের বিষয়টি অবহিত করেন এবং সবার পরামর্শে ও ওলামাদের সাথে নিয়ে শুক্রবার গাছা থানায় গিয়ে মামলা করেন।

এ ব্যাপারে গাছা থানার ওসি মো. ইব্রাহিম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মসজিদের ভুক্তভোগী ইমাম দুইজনকে আসামি করে পর্নোগ্রাফিসহ ফৌজদারি অপরাধের বিভিন্ন ধারায় থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আমরা ইতোমধ্যে মশিউর রহমান মুকুল নামে একজন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। মামলার প্রধান আসামি মফিজুর রহমান টুটুল পলাতক রয়েছে। আমরা তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযোদ্ধাদের ‘মা’খ্যাত আক্তার নেসা আর নেই

দয়া করে এই ওয়েব সাইট থেকে কপি করার চেষ্টা বন্ধ করুন।

গাছায় জুমার বয়ানে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা করায় ইমামকে মারধর ও নগ্ন ভিডিও ধারণা, গ্রেপ্তার ১

প্রকাশ ০৫:১১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার চান্দরা এলাকায় একটি মসজিদে জুমার বয়ানে মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা করায় ইমামকে মারধর ও দিগম্বর করে ভিডিও ধারণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পর্নোগ্রাফি আইনে গাছা থানায় মামলা হয়েছে।

পুলিশ মামলার আসামি গাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মশিউর রহমান মুকুলকে গ্রেফতার করেছে। মামলার প্রধান আসামি মুকুলের ছোট ভাই এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি মফিজুর রহমান টুটুল পলাতক রয়েছে।

এক সপ্তাহ আগে এ ঘটনা ঘটলেও লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ইমাম এতদিন মুখ খুলেননি। অপরদিকে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলও ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালায়; কিন্তু ক্রমেই আলেম সমাজ ক্ষোভে ফুঁসে উঠলে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।

মামলার প্রধান আসামি এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় মসজিদের ইমাম দুই মাসের টানা ছুটি নিয়ে ভয়ে পরিবারসহ গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন।

মাদক কারবারিরা ইমামের বিবস্ত্র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ৫০ হাজার টাকাও আদায় করেছে বলে মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

গাছা থানার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দরা আল আকসা জামে মসজিদের হুজরাখানায় (ইমাম সাহেবের কক্ষ) এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আলেম সমাজের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

মামলার বাদী মসজিদের ইমাম মুফতি শফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, তিনি মসজিদ সংলগ্ন দারুল হাবিব নামের মাদ্রাসা পরিচালনা করেন। উক্ত মাদ্রাসার পাশে মাদক কারবারিদের বিভিন্ন অপকর্মসহ মাদক বেচা-কেনা ও মাদকের নিয়মিত আড্ডা বসত। এতে মাদ্রাসার ছাত্রদের মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছিল। তিনি জুমার খুতবায় গুরুত্বসহ মাদকের কুফল নিয়ে আলোচনা রাখতেন। জুমায় মাদক নিয়ে আলোচনার কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছিল।

তিনি জানান, এর জেরে এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিরা ক্ষুব্ধ হয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিসহ তাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল। এসব হুমকি উপেক্ষা করে তিনি মানুষকে মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে মসজিদে নিয়মিত আলোচনা অব্যাহত রাখেন।

ইমাম জানান, এতে একপর্যায়ে গত ২৬ জানুয়ারি জুমার আগের দিন দুপুর ১২টায় এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি মফিজুর রহমান টুটুলের (৩৭) নেতৃত্বে এলাকার মাদক কারবারিরা মসজিদের হুজরাখানায় (ইমাম সাহেবের কক্ষ) দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে ঢুকে তার ওপর চড়াও হয়। এ সময় তাকে মারধর ও দিগম্বর করে মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও ধারণ করে। ইমামের এ বিবস্ত্র ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে।

তিনি জানান, তিনি মানসম্মানের ভয়ে গ্রামের বাড়ি থেকে বিকাশে টাকা এনে দিতে বাধ্য হন। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় মাদ্রাসার ছাত্রদের মাধ্যমে তাকে মাদ্রাসা থেকে ডেকে বের করে রাস্তায় ফেলে আবারো বেধড়ক মারধর করে। অবশেষে নিরুপায় হয়ে তিনি এলাকার আলেম-ওলামাদের বিষয়টি অবহিত করেন এবং সবার পরামর্শে ও ওলামাদের সাথে নিয়ে শুক্রবার গাছা থানায় গিয়ে মামলা করেন।

এ ব্যাপারে গাছা থানার ওসি মো. ইব্রাহিম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মসজিদের ভুক্তভোগী ইমাম দুইজনকে আসামি করে পর্নোগ্রাফিসহ ফৌজদারি অপরাধের বিভিন্ন ধারায় থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আমরা ইতোমধ্যে মশিউর রহমান মুকুল নামে একজন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। মামলার প্রধান আসামি মফিজুর রহমান টুটুল পলাতক রয়েছে। আমরা তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।