গাজীপুরের শ্রীপুরে মা-বোন হত্যা মামলার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর মরদেহ ভাসছিল বাড়ির পাশের পুকুরে। ২০১৩ সালে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নিহতের মা-বোনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় তাঁকেও কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি।
রোববার বাড়ির পাশের পুকুরে তাঁর মরদেহ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার প্রহলাদপুর ইউনিয়নের কাচারিপাড়া গ্রামে। থানা-পুলিশসহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
নিহতের নাম—শাহজাহান মিয়া (৩৮)। তিনি ওই গ্রামের মৃত আমির উদ্দিনের ছেলে।
নিহতের ভাই ও মা-বোন হত্যা মামলার বাদী মজিবর রহমান বলেন, ‘২০১৩ সালে স্থানীয় নাছির উদ্দিনের ছেলে রবিন, ইসলাম উদ্দিনের ছেলে নাঈম, আয়নাল হোসেনের ছেলে ইউসুফ, আব্দুল বাতেনের ছেলে এমরান, রজব আলীর ছেলে রুবেল ও সাকিল আমার মা-বোনসহ আরও একজনকে নির্মমভাবে খুন করে। ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না বলে প্রাণে বেঁচে যাই। আজ পুকুর থেকে আমার ভাইয়ের মরদেহেও কোপানোর চিহ্ন রয়েছে। ২০১৩ সালে তাঁকে কোপানো হয়েছিল, কিন্তু দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় সে প্রাণে বেঁচে যায়। আমার ওই ভাই (শাহজাহান) এ খুনের মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বোন আরিফা কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায় অভিযুক্ত আসামি রবিন তাঁকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় অভিযুক্তরা আমার মা-বোনকে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করে। আজ আমার ভাইয়ের মরদেহ পুকুরে ভাসছে। সে কীভাবে মারা গেল, কেউ মেরে ফেলেছে না কি, তা আমি বলতে পারছি না।’
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামাল হোসেন বলেন, ‘২০১৩ সালে প্রেমের সম্পর্কের জেরে নিহতের মা হাসিনা বেগম ও তাঁর বোন কলেজপড়ুয়া ছাত্রী আরিফা আক্তারসহ তিনজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত শাহজাহান মিয়া ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। নিহত শাহজাহান মিয়া ছিলেন ত্রিপল মার্ডারের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। আজ সকালে স্থানীয়রা শাহজাহানের মরদেহ পুকুরে ভাসতে দেখে আমাদের খবর দেয়। আমরা ঘটনার বিষয়ে তাঁর ভাইয়ের কাছে জানতে চাইলেও, সে ভয়ের কারণে কোনো কথা বলছে না।’
এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, পুকুর থেকে ভাসমান অবস্থায় ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, ‘মরদেহটি পচে ফুলে যাওয়ায় শরীরের চামড়া উঠে গেছে। শরীরে মাছ ও পোকা কামড়ানোর দাগ রয়েছে। এ বিষয়ে সকল বিষয় সামনে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে ট্রিপল মার্ডারের ওই মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।